পাহাড়ে সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতায় জীবনহানি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে- এমনটিই আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অন্তঃকোন্দল সেই সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
পাহাড়ে সংঘাত দানা বেঁধে ওঠে ১৯৭২ সালে। এ সময় পাহাড়িদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে গড়ে ওঠে মানবেন্দ্র লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতি নামের সংগঠন। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জিয়াউর রহমান সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড পাহাড়ে অশান্তির দাবানল সৃষ্টি করে। ’৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তিচুক্তির আওতায় পার্বত্য তিন জেলায় শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু জনসংহতি সমিতির একাংশ শান্তিচুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইউপিডিএফ নামের সংগঠন গড়ে তোলায় পাহাড়ে প্রত্যাশিত শান্তি ফিরে আসেনি।
পাহাড়ে সংঘাতে গত ১৫ মাসে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে পাহাড়ের দুই জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক দলগুলো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব হামলার ঘটনা মূলত তিনটি আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এগুলো হচ্ছে ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এবং জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। এই তিনটি দলের মধ্যে এক পক্ষে ইউপিডিএফ এবং আরেক পক্ষে রয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)।
একবার এক বা দুই দলের কেউ আক্রান্ত হলে পরেরবার তাদের প্রতিপক্ষের কেউ হামলার শিকার হচ্ছে। তবে কোনো পক্ষই ঘটনার দায় স্বীকার করে না। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় হতাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষও। তবে এবার আঞ্চলিক দলগুলোর বাইরে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ।
১৯৭২ সালে পাহাড়ের মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য জেএসএস গঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি হওয়ার পর জেএসএসের বাইরে ইউপিডিএফ নামে নতুন দল গঠিত হয়। পরে ২০১০ সালে মূল জেএসএস ভেঙে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। ২০১৫ সালে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে খুনোখুনি প্রায় বন্ধ ছিল। তবে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ ভেঙে আরও একটি নতুন দল গঠিত হয়।
ইউপিডিএফের সাবেক নেতা তপন জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। নতুন এ সংগঠন আত্মপ্রকাশের পরই অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের ২০ দিনের মাথায় ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচরে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউপিডিএফ নেতা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে ব্রাশফায়ারে খুন করে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে শুরু হয় খুনোখুনি।
পার্বত্য এলাকায় উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ড
টাইমস/এসআর/এসআই