কাঁদছেন মুশফিক : দেশে ফিরতে চান তামিম

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে শুক্রবার একটি মসজিদে গোলাগুলির ঘটনায় পুরো শহরই এখন অবরুদ্ধ। অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের বিশেষ এসকর্টে করে নভোটেল হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

মসজিদ থেকে ড্রেসিং রুমে ফিরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। অঝোরে কাঁদছেন সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এক মুহূর্ত ওখানে না থেকে দেশে ফিরতে চাইছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য তামিম ইকবাল।

এরই মধ্যে শহরের একাধিক জায়গায় সন্ত্রাসী হামলার খবর আসতে থাকে। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও। ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের কাছেই যে মসজিদে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন, সেই মসজিদেই সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে।

বাংলাদেশ দলের বাস তখন মসজিদের সামনে। ক্রিকেটাররা বাস থেকে নেমে মসজিদে ঢুকবেন, এমন সময় রক্তাক্ত শরীরের একজন নারী ভেতর থেকে টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। ক্রিকেটাররা তখনো বুঝতে পারেননি ঘটনা কী। তারা হয়তো মসজিদে ঢুকেই যেতেন, যদি না বাসের পাশের একটা গাড়ি থেকে ভদ্র এক নারী বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলতেন, ‘ভেতরে গোলাগুলি হয়েছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে। তোমরা ভেতরে ঢোকো না।’

ক্রিকেটাররা তখন বাসেই অবরুদ্ধ হয়ে আটকা পড়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। কারণ পুলিশ ততক্ষণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাসে বসেই তারা দেখতে পান, মসজিদের সামনে অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। অনেকে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসছেন মসজিদ থেকে। যা দেখে আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। কারণ বাসে কোনো নিরাপত্তাকর্মী দূরে থাক, স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিসারও ছিলেন না।

রাস্তায় তখন অনেক পুলিশ। সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছে পুলিশের গাড়ি। অনেকক্ষণ বাসে বসে থাকার পর ক্রিকেটাররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস থেকে নেমে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সবার চোখেমুখে তখন আতঙ্ক। কারণ দূরত্বটা একেবারে কম নয়। সেটি কমাতে রাস্তা ছেড়ে সবাই নেমে পড়েন হ্যাগলি পার্কে। পার্কের মধ্য দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে সবাই মাঠে ফেরেন।

মাঠে ফিরে সবাই ড্রেসিংরুমে ঢুকে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্রিকেটাররা বলছিলেন, তৃতীয় টেস্টের আগের দিনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলন একটু দেরিতে শেষ না হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত।

বাংলাদেশ দলের মসজিদে ঢোকার কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যেতে যেতে ১টা ৪০ বেজে যায়। বাংলাদেশ দলের বাস আর পাঁচ মিনিট আগে মসজিদে পৌঁছে গেলে ক্রিকেটাররা সন্ত্রাসী হামলার সময় মসজিদের ভেতরেই থাকতেন। তাহলে কী হতে পারত, আর যা দেখেছেন-দুটি মিলিয়ে মুশফিকুর রহিম হাঁটতে হাঁটতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন।

তামিম ইকবাল বলতে থাকেন, ‘যা দেখেছি, এরপর আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। এই টেস্ট খেলার প্রশ্নই আসে না। আমি দেশে ফিরে যাব।’

বাসে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ ও বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন আইয়ারও। কোচিং স্টাফরা ছিলেন মাঠে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য জানালেন সাকিব Apr 25, 2024
img
গাজায় ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়ার অভিযোগ Apr 25, 2024
img
দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর Apr 25, 2024
img
শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র Apr 25, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস Apr 25, 2024
img
এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো স্বর্ণের দাম Apr 25, 2024
img
চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ Apr 25, 2024
img
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি: কাদের Apr 25, 2024
img
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Apr 25, 2024